আমরা জানি পদার্থ কতগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত, যার নাম পরমাণু। ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে পরমাণু গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস, যা প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত। ইলেকট্রন এই নিউক্লিয়াসের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। প্রোটন ধনাত্মক (+) আধানযুক্ত, ইলেকট্রন ঋণাত্মক (-) আধানযুক্ত এবং নিউট্রন হলো আধান নিরপেক্ষ কণা। প্রোটনের ধনাত্মক চার্জের পরিমাণ ইলেক্ট্রনের ঋণাত্মক চার্জের সমান ও বিপরীতধর্মী।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো পরমাণু নিজে কিন্তু আধান নিরপেক্ষ। পরমাণু ধনাত্মক বা ঋণাত্মক কোনোটাই নয়। পরমাণুতে কোনো মোট চার্জ থাকে না। এর কারণ কী? কারণ হলো একটি পরমাণুতে যে কয়টি প্রোটন থাকে, সেই কয়টিই ইলেকট্রন থাকে। যার ফলে পরমাণু চার্জ বা আধান নিরপেক্ষ হয়। কিন্তু যখনই দুটো পদার্থকে ঘর্ষণ করা হয়, তখন একটি পদার্থের ইলেকট্রন অন্য একটি পদার্থে চলে যেতে পারে। ফলে একটি পদার্থে ইলেকট্রনের আধিক্য দেখা দিতে পারে। এবার একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। একটি কাচের বোতলকে এক টুকরা সিল্কের কাপড় দ্বারা ঘর্ষণ করা হলো। এতে দেখা যাবে সিল্কের কাপড় কাচ থেকে ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে তার দিকে নিয়ে গেছে। এতে বোতলটি ধনাত্মক আধানযুক্ত এবং সিল্কের কাপড়টি ঋণাত্মক আধানযুক্ত হয়েছে। তাহলে একটা ব্যাপার এখানে স্পষ্ট যে ঘর্ষণের ফলে নতুন কোনো আধানের সৃষ্টি হয় না বরং পদার্থের মধ্যে বিদ্যমান ইলেকট্রনে অবস্থিত আধান ইলেকট্রনের সাথে এক পদার্থ থেকে অন্য পদার্থে চলে যায়।
আধান বা চার্জের ধর্ম
আমরা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছি, কীভাবে আধানের উৎপত্তি হয়। এবার আমরা দেখবো এই আধানগুলো (ধনাত্মক ও ঋণাত্মক) কিরূপ ধর্ম প্রদর্শন করে। এর জন্য আমরা নিচের কাজগুলো করব।
কাজ: চার্জের ধর্ম জানা। প্রয়োজনীয় উপকরণ: দুটি চিরুনি ও পশমি কাপড়। পদ্ধতি: একটি ছোটো প্লাস্টিকের চিরুনিকে সুতা দিয়ে বেঁধে একটি শুকনো কাঠির মাথায় ঝুলিয়ে দাও। এটি এমনভাবে ঝুলাতে হবে যাতে আশেপাশে কোনো কিছু স্পর্শ না করে। এবার আরেকটি শুকনো কাঠির মাথায় অন্য একটি প্লাস্টিকের চিরুনি ঝুলাও যাতে এটা মুক্তভাবে ঝুলতে থাকে। এবার উভয় চিরুনিকে কিছুক্ষণ পশমি কাপড় দিয়ে ঘষো। এখন চিরুনি দুটিকে কাছাকাছি আনো। কী লক্ষ করছো চিরুনি দুটি পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে। এবার পশমি কাপড়টি চিরুনির কাছে এনে দেখ এটি চিরুনির কাছে চলে আসবে। |
কাজ: চার্জের ধর্মের প্রদর্শন। ![]() পদ্ধতি: দুটি বেলুনকে ফুলিয়ে সুতা দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে নাও। এবার একটি বেলুনকে উলের কাপড় বা সোয়েটার দিয়ে ঘষে কাগজের টুকরার কাছে ধরলে দেখা যাবে যে বেলুন কাগজের টুকরোগুলো কাছে টেনে নিচ্ছে। পুনরায় দ্বিতীয় বেলুনটিকে উলের কাপড় বা গায়ের সোয়েটারের সাথে চেপে ধরলে দেখা যাবে বেলুনটি কাপড়ের গায়ে লেগে আছে। এর কারণ কী? কারণ ঘর্ষণের ফলে উলের কাপড় ও বেলুনে বিপরীতধর্মী আধানের সৃষ্টি হয়েছে। এবার যখন দ্বিতীয় বেলুনকে প্রথম বেলুনের কাছে নেওয়া হবে তখন কী দেখবে? দেখবে যে চিত্রের ন্যায় দুটি বেলুন পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কারণ ঘর্ষণের ফলে দুটি বেলুনেই একই ধরনের আধানের সৃষ্টি হয়েছে। |
উপরোক্ত কাজগুলো থেকে তুমি কি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পার? হ্যাঁ, এর থেকে দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়:
ক) সমধর্মী আধান পরস্পরকে বিকর্ষণ করে (দুটি বেলুন অথবা দুটি চিরুনির ক্ষেত্রে)।
খ) বিপরীতধর্মী আধান পরস্পরকে আকর্ষণ করে (উলের কাপড় ও বেলুন)।
common.read_more